আমরা প্রায়ই শুনি, “সমকামিতা ধর্মের বিরুদ্ধে”, “ঈশ্বর এমন সম্পর্ক চান না”, কিংবা “ধর্মসম্মতভাবে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ”। কিন্তু একটু পেছনে তাকালেই দেখা যায়—সমকামিতা মুক্ত কোনো ধর্মই আসলে নেই। বরং, প্রতিটি ধর্মের ইতিহাসেই সমলিঙ্গ প্রেমের চিহ্ন আছে। প্রশ্ন উঠছে—তাহলে এত ঘৃণা কেন? এই ঘৃণার উৎস ধর্ম, না কি মানুষের নির্মিত ‘নিয়ন্ত্রণ’ কাঠামো?
ওল্ড টেস্টামেন্টের লেভিটিকাস-এ সমকামিতাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলা হয়েছে। এমনকি মৃত্যুদণ্ডের কথাও রয়েছে। তবে নিউ টেস্টামেন্ট একটু আলাদা—সেখানে কিছু অংশ এমনভাবে লেখা যে অনেকে মনে করেন এতে ‘স্বাভাবিকভাবে বিষমকামীদের’ সমকাম চর্চাকে সমস্যা হিসেবে দেখানো হয়েছে, কিন্তু যারা জন্মগতভাবে সমকামী তাদের নয়।
রোমান ক্যাথলিক চার্চ, বিশ্বের সবচেয়ে বড় খ্রিস্টান গোষ্ঠী, বর্তমানে সমকামিতা নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকলেও, তাদের নিজস্ব সমস্যা রয়েছে। হাজারো যাজক ও ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আছে, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা হয়েছে একই লিঙ্গের শিশুদের প্রতি। তবুও, সমকামিতাকে স্বীকার করতে তারা নারাজ।
এখানে এক ভয়াবহ দ্বিচারিতা দেখা যায়—সমকামিতাকে ঘৃণা করা হচ্ছে, কিন্তু একই ধর্মীয় কাঠামোর ভেতরেই সেটির অনুশীলন চলছে, অনেক সময় জোর করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে।
ইসলাম ধর্মে সমকামিতা হারাম এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। অথচ ইসলামি ইতিহাস ঘাটলেই দেখা যায়, মুসলিম সভ্যতায় বহু কবি ও সাহিত্যিক সমলিঙ্গ প্রেমে যুক্ত ছিলেন—পারস্যের রুবাইয়াত থেকে শুরু করে মুঘল আমলের নথিতে এর উপস্থিতি স্পষ্ট।
হিন্দুধর্মের কথাও আলাদা নয়। অনেক পুরাতন গ্রন্থে যেমন কুমারসম্ভব, কামসূত্র, অথবা প্রাচীন মূর্তিকলায় সমলিঙ্গ মিলনের ছবি ফুটে উঠেছে। শিব-নারায়ণের ভিন্ন ভিন্ন অবতারে এমন সম্পর্কের রূপও দেখা যায়, বিশেষ করে আরধনার অংশ হিসেবে।
তবে এই ইতিহাস আমাদের ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে এখন ধর্মকে ব্যবহার করছে নিছকই নৈতিকতা রক্ষার মোড়কে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার অস্ত্র হিসেবে।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা জরুরি—সমকামীতা কখনোই যৌন নিপীড়নের সমার্থক নয়। যেকোনো যৌন নিপীড়ন, তা সমকামী হোক বা বিষমকামী, তা একটি ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু ঘৃণাপূর্ণ প্রচারণায় অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে এই দুটি আলাদা বিষয়কে এক করে ফেলছে, যাতে সমাজে সমকামীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়া যায়।
যদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সাহস করে স্বীকার করত যে, সমকামিতা একটি প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, তাহলে সমাজের এই বিশাল সংকট অনেকটাই কেটে যেত। কিন্তু তারা তা করে না। কেন? কারণ যতক্ষণ তারা ‘নৈতিক প্রহরী’ হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারছে, ততক্ষণই তারা মানুষের জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে—বিয়ে, পরিবার, জন্মনিয়ন্ত্রণ, এমনকি লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণেও।
সমকামিতার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা মানে প্রকৃতির বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করা। ধর্মের নামে এই অস্বীকার আসলে একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক হিংস্রতার অংশ। ভালোবাসা, আকর্ষণ ও যৌনতা মানুষের মৌলিক অধিকার—এটি কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, পুরোহিত বা ইমামের অনুমতির অপেক্ষায় থাকবে না।
তাই প্রশ্ন শুধু একটাই—
আপনি কি বিশ্বাস করেন যে প্রত্যেক মানুষ তার ভালোবাসা নিজেই বেছে নেওয়ার অধিকার রাখে?
9 Responses
এই লেখাটি অনেককে ভাবতে বাধ্য করবে।
লেখাটি পড়ে মনে হলো আপনি শুধু হতাশা প্রকাশ করছেন।
সাহসী, স্পষ্ট এবং হৃদয়গ্রাহী লেখা।
লেখাটি পড়ার পর মনে অনেক শান্তি পেলাম।
আপনি কি পাঠকের অনুভূতির কথা চিন্তা করেন না?
আপনার ভাষা অতিরিক্ত কড়া মনে হলো।
লেখাটিতে অনেক বেশি আবেগ এবং কম যুক্তি রয়েছে।
আপনার বক্তব্য অতিরিক্ত রূঢ় এবং অসম্পূর্ণ।
আপনার প্রতিটি কথায় উপলব্ধি লুকিয়ে আছে।