সমকামভীতি: ধর্ম, জনসংখ্যা ও আধিপত্যের কুৎসিত রাজনীতি

সমকামীতা নিয়ে যত না ভীতি, তার চেয়ে বেশি ভীতি মানুষের স্বাধীনতা নিয়ে। এই ভীতি ছড়ায় তারা, যারা সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। ধর্ম, রাষ্ট্র ও জনসংখ্যার হিসাব নিকাশ—সব মিলিয়ে সমকামভীতির পেছনে দাঁড়িয়ে আছে এক গভীর রাজনৈতিক এবং সামাজিক মিথ।

প্রত্যেক ধর্মই চায় তার অনুসারী বাড়ুক। তাদের সংখ্যা বেশি হলে তারা সামাজিক-রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। এই লক্ষ্যেই চলে ‘প্রজনন ধর্মনীতি’—যেখানে ধর্মীয়ভাবে উৎসাহিত করা হয় সন্তান নিতে, এবং নিরুৎসাহিত করা হয় বিকল্প যৌনতা, যেমন: সমকামিতা, উভকামিতা, বা সন্তানহীনতা।

সমকামী বা নিঃসন্তান মানুষ এই ‘পরিকল্পনায়’ বিঘ্ন ঘটায়। তারা সন্তান নেয় না, কিংবা ধর্মীয় রীতিকে অগ্রাহ্য করে—ফলে তাদেরকে অপরাধী বানানো সহজ হয়ে যায়।

ডানপন্থী রাজনীতি ধর্মকে হাতিয়ার করে মানুষকে গোত্রে বিভক্ত করে। বাংলাদেশের জামায়াত, ভারতের বিজেপি, পাকিস্তানের ইসলামপন্থীরা, কিংবা আমেরিকার রিপাবলিকানরা—সবাইই সংখ্যাগরিষ্ঠদের আধিপত্য চায়।

  • মুসলিম দেশগুলোতে সমকামীদের আইনি ও সামাজিকভাবে নিপীড়িত করা হয়।

  • ভারতে মুসলিমদের সংখ্যার ভয়ে হিন্দু পরিবারগুলোতে বেশি সন্তান নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

  • আমেরিকায় অভিবাসী ও সংখ্যালঘুদের বংশ বিস্তার ঠেকাতে নারীদের গর্ভপাত অধিকার খর্ব করা হয়, সমকামী দম্পতিদের সন্তান নেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়।

এরা সবাই এক জায়গায় মিলিত—ধর্মের নামে মানুষের মৌলিক অধিকারকে দমন করা।

একদিকে ধর্মীয় সমাজ সন্তান জন্ম দিতে বলে, অন্যদিকে পৃথিবীর লাখো অনাথ শিশুর দিকে চোখ ফেরায় না। অথচ সমকামী দম্পতিরা সবচেয়ে বেশি অনাথ শিশু দত্তক নেন—তাদের আশ্রয়, শিক্ষা ও ভালোবাসার নিশ্চয়তা দেন। ধর্মাবলম্বীরা যেখানে কেবল “নিজেদের সংখ্যা” বাড়াতে ব্যস্ত, সেখানে সমকামী পরিবারগুলো পৃথিবীর ভার লাঘব করতে সাহায্য করে।

সমকামীতা এক ধরনের ‘আত্মনিয়ন্ত্রণ’ ও ‘বিকল্প পথ বেছে নেওয়া’র প্রতীক। এই আত্মস্বাধীনতাই ধর্মভিত্তিক সমাজের জন্য হুমকি। তারা চায় সবাই যেন একই নিয়মে চলে, যাতে নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। তাদের সবচেয়ে বড় ভয়—মানুষ যদি নিজের যৌনতা, জীবনপথ ও পরিচয় বেছে নিতে শেখে, তাহলে ধর্ম-জাত-গোত্র-ভেদ সব ভেঙে পড়বে। আর এটাই তাদের গলার কাঁটা।

এই পৃথিবীর আসল যুদ্ধটা ‘ভালোবাসা বনাম শাসন’-এর। কেউ ভালোবাসা দিতে চায়, কেউ তা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। সমকামী বা উভকামী মানুষেরা কাউকে আঘাত করে না, কাউকে শোষণ করে না। তবুও তাদের শাস্তি দেওয়া হয়, কারণ তারা ‘গোত্রের সন্তান উৎপাদনের কারখানা’ নয়। আজ সময় এসেছে এই ভণ্ডামিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর। সমকামীতা কোনো বিপদ নয়—ভয়ংকর হলো সেই সমাজ, যারা ভালোবাসাকে অপরাধ বানায়।

11 Responses

  1. মনকে ছুঁয়ে যাওয়া লেখনী।

  2. প্রতিবারই নতুন কিছু শেখাই আপনার লেখা থেকে।

  3. আপনি কি কখনো তথ্য যাচাই করেন লেখার আগে?

  4. আপনার চিন্তাধারা এত একপেশে কেন?

  5. দারুণ উপলব্ধি প্রকাশ করেছেন।

  6. আপনার লেখায় কোনো বাস্তবতা খুঁজে পেলাম না।

  7. ছিঃ সমকামিতা নিয়ে লিখতে লজ্জা করল না আপনার?

  8. মুসলমান নাম নিয়ে আছেন, জানেন না সমকামিতা ইসলামে হারাম?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *