মুসলিম রাষ্ট্রের এক অদৃশ্য সংখ্যালঘু: বাংলাদেশে এলজিবিটি জীবনের বাস্তবতা

বাংলাদেশ—একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এখানে ধর্ম, সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধের ওপর দাঁড়িয়ে আছে প্রতিটি সম্পর্ক, প্রতিটি কাঠামো। অথচ সেই কাঠামোর মধ্যেই প্রতিনিয়ত নিঃশব্দে নিঃশেষ হচ্ছে একটি সম্প্রদায়—এলজিবিটি সম্প্রদায়। তারা রয়েছে, কিন্তু অদৃশ্য। তারা বেঁচে আছে, কিন্তু পরিচয়হীনভাবে। তারা নাগরিক, কিন্তু যেন অচেনা।

যখন একজন মানুষ নিজের যৌন পরিচয় প্রকাশ করতে ভয় পায়, সেটা শুধু ব্যক্তিগত সমস্যা নয়—এটা একটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা। ৩৭৭ ধারা—এই ঔপনিবেশিক আইনের ছায়াতেই বাংলাদেশে আজও সমকামীতা ‘অপরাধ’। ফলে যারা সমকামী, উভকামী কিংবা রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষ, তাদের বেঁচে থাকা মানে এক ধরনের সামাজিক ও মানসিক যুদ্ধ।

শ্বাসরুদ্ধকর এই বাস্তবতা অনেকের জন্য নিরব আত্মহত্যায় পরিণত হয়। কেউ বিয়ের রাতে আত্মহত্যা করে, কেউ পিটুনিতে মরে—পরে তার পরিচয় ঢেকে ফেলা হয় চোর বা ডাকাতের পরিচয়ে।

বাংলাদেশে একসময় ‘বয়েজ অফ বাংলাদেশ’, ‘গে বাংলাদেশ’, ‘রূপবান’—এমন কিছু সংগঠন অনলাইন বা সীমিত পরিসরে এলজিবিটি অধিকার নিয়ে কাজ করত। ২০১৬ সালে জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয়-এর হত্যাকাণ্ডের পর সেই কণ্ঠগুলো স্তব্ধ হয়ে যায়। যারা দেশ ছাড়তে পেরেছেন, পেরেছেন। বাকিরা নিঃশব্দে লুকিয়ে আছেন। একজন ‘বাংলাদেশি’ হয়ে নিজের দেশেই নিজের পরিচয় গোপন রেখে বেঁচে থাকা—এটাই ‘অদৃশ্য সংখ্যালঘু’ হওয়ার সবচেয়ে বেদনার বাস্তবতা।

ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, তুরস্ক—এসব মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেও সমকামিতা আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে অপরাধ নয়। যদিও সামাজিকভাবে এখনও বৈষম্য রয়েছে, অন্তত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি সেখানে একটি আশার আলো দেখায়।

কিন্তু বাংলাদেশে, ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে এবং ভোট ব্যাংকের হিসাব নিকাশে, রাষ্ট্র এখনও এই মানুষগুলোর জীবন নিয়ে কথা বলতে সাহস পায় না। ধর্মের নামে সহিংসতা ও অনার কিলিংয়ের বাস্তবতাও প্রশাসনিক স্তরে অস্বীকার করা হয়—তাতে অপরাধীরা সাহসী হয়, আর ভুক্তভোগীরা আরও একা হয়ে যায়।

ধর্মের নামে যখন ঘৃণা বৈধতা পায়, তখন সেটা আর ধর্ম নয়—তা হয়ে ওঠে ক্ষমতার হাতিয়ার। ইসলাম হোক কিংবা অন্য কোনো ধর্ম—সব ধর্মেই মানুষের প্রতি সহানুভূতি, সহনশীলতা ও মমত্ববোধের শিক্ষা রয়েছে। কিন্তু সেই শিক্ষাগুলো হারিয়ে গেছে অন্ধবিশ্বাস, ভুল ব্যাখ্যা ও রাজনৈতিক ব্যবহারের মধ্যে।

সমকামিতা কোনো বিকৃতি নয়। এটি একটি প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত একটি যৌন অভিমুখতা। একজন মানুষ কাকে ভালোবাসবেন, তা তার মৌলিক অধিকার। সেই অধিকার কেড়ে নেওয়া, অস্বীকার করা বা শাস্তিযোগ্য করে তোলা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।

একটি রাষ্ট্র তখনই সভ্য, যখন সে সবচেয়ে নিঃস্ব, সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষটির দিকেও দৃষ্টি রাখে। বাংলাদেশে এলজিবিটি সম্প্রদায় এখনো “কেউ নয়” হিসেবে বেঁচে আছে। কিন্তু তাদের জীবন, তাদের ভালোবাসা, তাদের অস্তিত্ব ঠিক ততটাই বাস্তব, যতটা আপনি আমি।

এটা শুধু আইনের কথা নয়, এটা আমাদের মনুষ্যত্বের পরীক্ষা। এখনো যদি মুখ ফিরিয়ে থাকি, ইতিহাস একদিন আমাদেরও ক্ষমা করবে না।

এদের আর অদৃশ্য হতে দেবেন না—চেনা মুখ হয়ে বাঁচার অধিকার দিন, সম্মান দিন।

20 Responses

  1. অনেক কিছু শেখার ছিল এই লেখায়।

  2. আপনার লেখা যেন শুধুই কষ্টের বহিঃপ্রকাশ।

  3. কুত্তার বাচ্চা, কি লিখস এসব?

  4. ফালতু কথা বলা বন্ধ কর।

  5. এই ধরনের লেখা সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায়।

  6. সমকামীরা তো নরকের কীট, তাদের সমাজ থেকে কি একদম দুনিয়া থেকে বিতাড়িত করতে হবে।

  7. একমত ভাই আপনার এই লেখার সাথে। আপনি এগিয়ে যান।

  8. নাস্তিকরা জানোয়ার ভন্ড, শয়তান এদেরকে কেটে ফেললে কোনো কিছু হবে না।

  9. নাস্তিক ব্লগাররা এই সব লেখালেখি ব্ন্ধ কর না হলে অবস্থা কিন্তু খারাপ করে দিব একদম।

  10. ব্লগার যা লেখা লেখে নাও তোমার দিন শেষ।

  11. মুসলমান রাষ্ট্রে সমকামীদের কোন জায়গা হবেনা। এটাই তো স্বাভাবিক।

  12. চিন্তাশীল এবং সংবেদনশীল লেখা।

  13. আপনার লেখায় আন্তরিকতার ছোঁয়া থাকে সবসময়। একটু সাবধানে থাকেন আপনি। বেশ কিছু সমকামী মানুষদের পুলিশ গন ধোলাই দিয়েছে। কয়েকজন মিসিং।

  14. ইহুদির বাচ্চা শালা জারজ। দেশে তরে টুকরা টুকরা কইরা কাঁটা হবে। আনসার ইসলাম জিহাদি ভাইয়েরা প্রস্তুত। তুই দেশে আয়।

  15. সুন্দর এনালাইসিস। তবে তোমাদের বাঁচিয়ে রাখা ইসলামের ঈমান নষ্ট করার মতো। তোকে মরতে হবে। আমরা মারব তোকে।

  16. এইগুলা হোলো আপনার অজ্ঞতার কারনে বলা। ইসলামে সমকাম হারাম। আপনাকে চোখে চোখে রাখা হচ্ছে।

  17. শুওরের বাচ্চা নাস্তিক ব্লগার মূত্যর জন্য অপেক্কা কর।

  18. এমন লেখা আরও চাই। চালিয়ে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *