বাংলাদেশে সমকামিতা এবং ধর্মীয় মূর্খতা: অদৃশ্য সংখ্যালঘুদের অন্ধকার বাস্তবতা

বাংলাদেশে সমকামী, উভকামী বা লেসবিয়ান পরিচয় ধারণ করা মানে যেন সমাজের চোখে অপরাধী হয়ে ওঠা। একটি এমন সমাজে আমরা বাস করি যেখানে কারো যৌন অভিমুখতা যদি সংখ্যাগরিষ্ঠের ধ্যানধারণার সঙ্গে না মেলে, তবে তা সঙ্গে সঙ্গে ‘অসুস্থ’, ‘পাপ’, কিংবা ‘অনৈতিক’ তকমা পেয়ে যায়।

সমকামিতা কোনো আধুনিক বা পশ্চিমা ‘সংস্কৃতির’ অংশ নয়—এটি মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই রয়েছে। পুরাতন গ্রীক, রোমান, ভারতীয় সভ্যতা থেকে শুরু করে আফ্রিকান উপজাতি, মায়ান ও ইনকা সংস্কৃতিতেও সমকামী সম্পর্কের নিদর্শন পাওয়া যায়। তবুও ধর্মের কঠিন ব্যাখ্যাগুলোর কারণে এই সম্পর্কগুলো অদৃশ্য হয়ে গেছে।

বাংলাদেশে, যেখানে ধর্মীয় বিশ্বাস সামাজিক জীবনের প্রতিটি স্তরে গভীরভাবে গেঁথে আছে, সেখানে ধর্মই আজ সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে একজন সমকামী বা উভকামীর জন্য তার পরিচয় ধারণ করার ক্ষেত্রে।

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মীয় ব্যাখ্যা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন, কিন্তু তারা এই ব্যাখ্যাগুলোর পেছনে যুক্তি, প্রেক্ষাপট বা ইতিহাস খতিয়ে দেখেন না। কোরআন হোক, বাইবেল হোক বা অন্য ধর্মগ্রন্থ—সমকামিতা সম্পর্কে যে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করা হয়েছে, তা বহুদিনের সাংস্কৃতিক নির্মাণ, যা ধর্মীয় ব্যাখ্যার নামে প্রচারিত হয়েছে।

ধর্মীয় অন্ধতা এখানে এতটাই প্রবল যে অনেকেই কেবল “আল্লাহ বলেছেন”, “কিতাবে লেখা আছে” এই কথাতেই যুক্তি শেষ করেন। অথচ, মানবিকতা, সহানুভূতি, সহনশীলতা—এসবই তো ধর্মের মৌলিক শিক্ষার অংশ হওয়ার কথা।

আমি নিজেই একজন উভকামি—এবং সেই পরিচয় নিয়েই প্রতিনিয়ত বাঁচার লড়াই করছি। যখন একজন পুরুষ বা নারী তাদের বিষমকামী সম্পর্কে নির্দ্বিধায় বলতে পারেন, সেখানে আমি আমার ভালোবাসা প্রকাশ করতে গেলেই তা হয়ে ওঠে ‘ঘোষণা’, ‘ব্যাখ্যা’ বা ‘দোষ স্বীকার’।

এই সমাজ আমাকে জোর করে চুপ করাতে চায়, এবং রাষ্ট্র আমাকে এক অদৃশ্য অপরাধীর আসনে বসিয়েছে। আমার একান্ত পরিচয়টি লুকিয়ে রাখতে হয় সমাজের, পরিবারের, এমনকি বন্ধুদের চোখে।

 

বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা এখনো সমকামী যৌন আচরণকে “প্রকৃতিবিরুদ্ধ” বলে চিহ্নিত করে। যার ফলে হাজারো এলজিবিটি+ মানুষ তাদের যৌনতা নিয়ে মুখ খোলার আগেই ভয় পায়—ধর্মের নয়, আইনের।

বাংলাদেশে ২০১৬ সালে “বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি (BSWS)”-এর জরিপে জানা যায়, এলজিবিটি+ লোকজন পরিবার, স্কুল, কর্মক্ষেত্র এমনকি পুলিশের কাছ থেকেও নির্যাতিত হন। অনেককে থানায় নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ পর্যন্ত করা হয়েছে।

এই সহিংসতা শুধু শরীর নয়, মনও ভেঙে দেয়। তারা হয়ে ওঠেন অদৃশ্য সংখ্যালঘু—যাদের না আছে অধিকার, না আছে পরিচয়ের নিরাপত্তা।

সমাধান কী?

  1. ৩৭৭ ধারার বিলুপ্তি ও যৌন অভিমুখতার বৈধতা স্বীকৃতি।

  2. ধর্মীয় ব্যাখ্যার মানবিক ও প্রগতিশীল পুনর্বিচার।

  3. স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন শিক্ষা এবং বৈচিত্র্য সম্পর্কে পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা।

  4. LGBTQ+ মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৈষম্যবিরোধী আইন প্রণয়ন।

  5. মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মাধ্যমে নির্যাতনের তথ্য বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা।

একজন মানুষ তার যৌন পরিচয় বা ভালোবাসার কারণে কখনোই অপরাধী হতে পারে না। ধর্ম যদি ভালোবাসাকে ঘৃণায় পরিণত করে, তবে সেই ধর্মের মানবিক ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশে যে ধর্মীয় মূর্খতা আজো সমকামিতাকে অপরাধ বা অসুখ হিসেবে গণ্য করে, তা আসলে মানবতার বিরুদ্ধে এক বিশাল ব্যর্থতা।

সমকামীদের অসুস্থ বলা নয়—সমাজের এই অজ্ঞতা ও নিষ্ঠুরতা সত্যিকারের অসুখ। এই অসুখ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়—জ্ঞান, মানবতা এবং আইনি স্বীকৃতির সম্মিলন।

13 Responses

  1. লেখস তো শুধু ইসলামের বিরুদ্ধে, অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে কি লিকিশ সবই দেখি। তোরে গর্দান এক কোপে ধড় থেকে ফেলে দিতে পারলে ভালো লাগতো

  2. আপনার মত মানুষ আমাদের দরকার।

  3. এই দুনিয়া থেকে সমস্ত কাফের, মুরতাদ বিদায় করা হবে। দেখে নিস তোরা।

  4. তুই থাকস লন্ডনে কুত্তার বাচ্চা, একবার দেশে আয়। কিভাবে কোপামু তারপর দেখবি

  5. আপনার লেখার মধ্যে শুধু তিক্ততা।

  6. হারামখোর তুই আসলে অমানুষের বাচ্চা

  7. এমন ভাবনা সমাজ বদলে দিতে পারে।

  8. লেখাটি নতুন করে ভাবালো। ভালো পর্যবেক্ষন।

  9. লেখাটিতে কোন পজিটিভ বার্তা নেই।

  10. তথাকথিত মুসলিমদের ‘মনুষ্যত্ব’ নেই আছে শুধু ‘ধর্মানুভুতি’। সেটিও খুব নড়বড়ে, কেউ কিছু বললেই আঘাতে জর্জরিত হয়।

  11. ভালোবাসা রইল আপনার লেখার জন্য।

  12. শুয়োরের বাচ্চা চড়াইতে চড়াইতে মেরে ফেলবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *