প্রাণীজগতে সমকামিতা: প্রকৃতির নিজস্ব বৈচিত্র্য

সমকামিতা কি কেবল মানুষের সমাজে সীমাবদ্ধ? না, মোটেই নয়। আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, প্রাণীজগতে অন্তত ১,৫০০টিরও বেশি প্রজাতিতে সমলিঙ্গের যৌন আচরণ দেখা যায়। পোকামাকড়, মাছ, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে শুরু করে আধুনিক স্তরের প্রাণী পর্যন্ত—সমকামীতা প্রকৃতিরই একটি স্বাভাবিক অংশ।

জিরাফ: ভালোবাসার ঘাড় ঘষাঘষি

পুরুষ জিরাফদের মাঝে ঘাড় ঘষার মাধ্যমে প্রেম শুরু হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, জিরাফদের যৌন সম্পর্কের প্রায় ৯০% ই সমলিঙ্গের মধ্যে ঘটে, বিশেষ করে পুরুষদের মাঝে। তাদের এই আলিঙ্গন ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলতে পারে।

ডলফিন: দ্বৈত যৌনতা ও বন্ধুত্ব

বোতলনাক ডলফিনরা উভকামী, এবং পুরুষ-মহিলা উভয়েই একে অপরকে যৌন আনন্দ দিয়ে থাকে। কখনো কখনো পুরুষ ডলফিনরা দীর্ঘ সময় শুধু সমকামী সম্পর্কেই থাকে। এদের যৌন আচরণ শুধু কামনা নয়—বন্ধুত্ব, নেতৃত্ব গঠন, সম্পর্ক গাঢ় করাও এর উদ্দেশ্য।

সিংহ: শক্তির ‘ব্রোম্যান্স’

একাধিক পুরুষ সিংহ একটি ‘জোট’ গঠন করে। তারা সমকামী যৌন আচরণ করে তাদের সম্পর্ক ও আনুগত্য শক্তিশালী করতে, যাতে নারী সিংহদের আকৃষ্ট করার সময় তারা একসাথে কাজ করতে পারে।

ম্যাকাক ও বাইসন: নারীরাও পিছিয়ে নেই

ম্যাকাকদের মাঝে বিশেষ করে মহিলা ম্যাকাকদের মধ্যে সমকামী সম্পর্ক খুব সাধারণ। তারা শুধু যৌন নয়, ঘনিষ্ঠ আবেগীয় সম্পর্কেও জড়িত থাকে। বাইসনদের ক্ষেত্রেও পুরুষদের মধ্যে সমলিঙ্গের যৌনতা বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে কিশোর বয়সে।

লেসন অ্যালবাট্রস ও রাজহাঁস: একসাথে জীবন পার

হাওয়াইতে বাস করা লেসন অ্যালবাট্রসদের প্রায় ৩০% জুটি দুই নারী নিয়ে গঠিত। তারা জীবনের পুরোটা সময় একসাথে থাকে এবং দত্তক নেওয়া ডিম থেকে ছানা লালন করে। রাজহাঁসদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। অনেক পুরুষ জুটি নিজেদের সন্তান লালন করতে অনাথ ডিম দত্তক নেয়।

ওয়ালরাস, ভেড়া ও বনবো: বহুরূপী আচরণ

  • পুরুষ ওয়ালরাসরা যৌন পরিপক্বতার পর উভকামী হয়। তারা একে অপরের সাথে জলে আলিঙ্গন ও যৌনক্রিয়ায় জড়ায়।

  • ভেড়াদের মধ্যে ৮% পুরুষ শুধুমাত্র অন্য পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট। গবেষণায় দেখা গেছে, এদের মস্তিষ্কের গঠন ভিন্ন এবং হরমোন উৎপাদন কম।

  • বনবো বানররা তাদের সামাজিক বন্ধন, চাপমুক্তি ও আনন্দের জন্য উভয় লিঙ্গের সাথেই যৌন আচরণ করে।

প্রাণীজগতে সমলিঙ্গের আকর্ষণ বা সম্পর্ক কোনও অস্বাভাবিকতা নয়। এটি মানবসভ্যতা নির্মিত নৈতিকতার বাইরে প্রকৃতির নিজস্ব এক অভিব্যক্তি। সমকামিতাকে “অসুস্থতা”, “পাপ”, বা “অস্বাভাবিকতা” বলা এক ধরনের বিজ্ঞান-অজ্ঞতাধর্মীয় কুসংস্কারের প্রতিফলন, যা প্রকৃতি নিজেই খণ্ডন করে চলেছে হাজার হাজার প্রজাতির মাধ্যমে। সমাজে বৈচিত্র্যকে স্বীকৃতি দিলে, আমরা কেবল মানুষ হিসেবে বড় হই না—প্রকৃতিরও অংশ হিসেবে পূর্ণতা লাভ করি।

11 Responses

  1. সত্যি কথা গুলো খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।

  2. আজ দেশ বিদেশে ইসলাম ধর্মকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।তার মূল কারণ হলো আমরা মুসলমানরা দায়ী কারন হলো মুসলমানের ঘরে সন্তান হয়ে আজ হিন্দুধমের পূজা করছে।আর তারা হলো ব্লগার নাস্তিকরা। তাদের কারনে আজ পৃথিবী থেকে ইসলাম ধম নিষিদ্দ করা হচ্ছে।

  3. এসব লেখায় কেউ উপকার পায় না।

  4. এগুলো না জানলেও কোন সমস্যা নাই।

  5. আপনার দৃষ্টিভঙ্গি সমাজ বিরোধী মনে হয়।

  6. সমকামিতা নিয়ে জেনে কি হবে? এসব আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন।

  7. সমিকামিতা প্রকৃতি বিরুদ্ধ একটি কাজ। ছিঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *