ওয়াজের মোল্লাদের প্রতি সাধারণ মুসলিমদের অন্ধ বিশ্বাস: ধর্মের নামে বিভ্রান্তি ও দায়িত্ববোধের প্রশ্ন

বাংলাদেশে ধর্মীয় বক্তৃতা বা ওয়াজ মাহফিল শুধুই ধর্ম চর্চার একটি স্থান নয়—এটি আজ পরিণত হয়েছে এক প্রভাবশালী সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে। বছরের বিশেষ মৌসুমে বিশেষ করে শীতে, দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে কিংবা শহরের পাড়ায় পাড়ায় এসব মাহফিল হয়—আর সেখানেই ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে গড়ে তোলা হয় এক বিশাল শ্রোতাগোষ্ঠী, যারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্মীয় শিক্ষায় দুর্বল এবং কেবল বিশ্বাস করে শুনেই।

এই শ্রোতাদের সামনে অনেক বক্তা এমন সব গল্প বলেন, যেগুলোর সত্যতা নেই, ইতিহাসে ভিত্তি নেই, এমনকি ইসলামিক স্কলারশিপেও নেই। তারা জানেন—তাদের কথার সত্যতা যাচাই করার মতো সক্ষমতা বেশিরভাগ শ্রোতার নেই। অধিকাংশ মানুষ বংশ পরম্পরায় যে ধর্ম পেয়েছে, সেটিকেই জীবনের একমাত্র সত্য ধরে নিয়েছে। ফলে যুক্তি, বিশ্লেষণ, বা প্রশ্ন করার সাহস নেই অনেকের মধ্যে। এই পরিস্থিতি বক্তাদের জন্য সুবিধাজনক এক পরিবেশ তৈরি করে—যেখানে তারা নিজের মত করে ধর্মীয় ব্যাখ্যা দিতে পারেন, এমনকি প্রভাবশালী রাজনৈতিক বক্তব্যও গুঁজে দিতে পারেন।

সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো—এই ওয়াজ মাহফিলগুলো কেবল ধর্মীয় আবেগ নয়, বরং রাজনৈতিক মতাদর্শের বিস্তারে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষত কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক আলেমরা হেফাজতে ইসলাম-এর মতো সংগঠনের মাধ্যমে পুরো দেশের ইসলামের প্রতিনিধিত্বের দাবি করেন। অথচ বাংলাদেশে বিভিন্ন ইসলামিক মতবাদ ও চিন্তাধারার আলেমগণ আছেন—আলিয়া ধারার বহু গুণী আলেম রয়েছেন, যাঁরা কখনোই এসব মৌলবাদী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। কিন্তু জনসংখ্যার ভারসাম্য এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে তারা ব্রাত্য।

প্রতিটি ধর্মই ব্যক্তি পর্যায়ে একটি অনুভবের জায়গা—তাকে পবিত্র রাখতে হলে আগে প্রয়োজন নিজের জ্ঞান, বিচার ও দায়িত্ববোধের বিকাশ। যখন ধর্মকে একধরনের ব্যবসা বা রাজনীতির হাতিয়ার বানিয়ে ফেলা হয়, তখন তা আর পবিত্র থাকে না—তা হয়ে ওঠে ভয়ের, ঘৃণার, বিভেদের একটি অস্ত্র।

আমাদের সমাজে ধর্মীয় বক্তাদের সামনে শ্রোতারা চুপচাপ বসে থাকেন, সম্মান করেন—কিন্তু সেই শ্রদ্ধার জায়গাটা যখন প্রশ্নহীন আনুগত্যে রূপ নেয়, তখন সেটা হয়ে ওঠে বিপজ্জনক। একজন মানুষ যখন শুধুমাত্র পাঞ্জাবি, দাড়ি ও সুন্দর কণ্ঠের মোহে মুগ্ধ হয়ে যান, তখন ভুল আর সত্যের পার্থক্য অনেক সময়েই তার চোখে পড়ে না।

একটি সুস্থ ধর্মভিত্তিক সমাজ তখনই গড়ে উঠবে, যখন মানুষ যুক্তি ও সত্যকে গুরুত্ব দেবে, শুধু আবেগ নয়। প্রশ্ন করা কোনো পাপ নয়। বরং প্রশ্নহীনতা মানুষকে অন্ধ করে দেয়।

যারা আজ ওয়াজ মঞ্চে দাঁড়িয়ে অসত্য প্রচার করছেন, তারা একদিন ওয়াজের নামে ধর্মকে ছোট করছেন বলেই ইতিহাসে লেখা থাকবে। কিন্তু যারা সেই কথা যাচাই না করেই বিশ্বাস করছেন, তারাও দায়মুক্ত নন। কারণ, যে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে, সে নিজের চিন্তাকে বন্ধ করে দেয়।

বাংলাদেশের মুসলিমদের উচিত এখনই আত্মসমালোচনায় ফেরা—কীভাবে আমাদের ধর্মব্যবস্থা এমন অন্ধ আনুগত্যের জায়গায় এসে দাঁড়ালো, কেনো সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করা কঠিন হয়ে গেলো, তা বুঝতে চেষ্টা করা।

16 Responses

  1. আপনার কথা গুলো ছড়িয়ে দেওয়া দরকার।

  2. ভাই আপনার এই লেখা পড়ে আমার খুব খারাপ লেগেছে।আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ আপনি এই লেখাটি তুলে ধরার জন্য।

  3. আপনার লেখা পড়লে মনে শান্তি আসে।

  4. লেখার আগে একটু চিন্তা করেন না?

  5. সব কিছুর মধ্যে ধর্মকে কেন টেনে আনিস নাস্তিকের বাচ্চা

  6. মুসলমানদের নিয়ে ব্লগার নাস্তিকরা কেন এতো মাথা ঘামায়।

  7. নিজের জীবনে কি কিছুই ভালো নেই?

  8. সবসময় সবকিছু খারাপ কেন আপনার কাছে?

  9. আপনার মতামত একপেশে ও বিদ্বেষমূলক।

  10. সালার ব্লগার নাস্তিকরা হঠাৎ এতো তৎপর হয়ে উঠলো কেন।

  11. নাস্তিক ব্লগারদের আমি শেষ করে দিবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *