আমাদের উপমহাদেশ যেন উত্তাপের ভাঁড়ে ফুটতে থাকা এক হাঁড়ি—একটুখানি নেড়ে দিলেই গরম হয়ে উঠি আমরা। ধর্ম, রাজনীতি, নারী—এই তিনটি বিষয় যেন একেকটা আগুনের গোলা। এর যেকোনো একটি ছুঁলেই আমরা যুক্তি-বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে নেমে পড়ি যুদ্ধের ময়দানে। বিশেষ করে ধর্মীয় পরিচয়, বিশ্বাস আর রীতি-নীতিকে ঘিরে যে সহিংসতা, তা প্রায়শই যুক্তির সীমা ছাড়িয়ে যায়।
কে কোথাও কী একটা আঁকল, কী একটা বলল, কে কী একটা লিখল—এসব সামান্য ইস্যুতেই আমরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠি, যেন এটা আমাদের অস্তিত্বের উপর আঘাত। অথচ একটু থেমে ভেবে দেখলে বোঝা যায়, ধর্মের নামে এই সংঘর্ষ অনেকটাই মানুষ-সৃষ্ট। বাস্তবে হিন্দু-মুসলিম কিংবা অন্য যেকোনো ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে যতটা অমিল ভাবা হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি মিল আছে তাদের রীতিনীতিতে।
দুই ধর্মের অনুসারীরাই খাবার নিয়ে একধরনের নিষেধ মানেন—একজন বলেন হালাল না হলে খাবেন না, আরেকজন বলেন অন্য ধর্মাবলম্বীর ছোঁয়া লাগলে খাবেন না। ধর্মীয় উপবাস—রোজা বা উপবাস—দু’দলেই শুদ্ধতার প্রতীক। দুই পক্ষই পবিত্র জলে বিশ্বাস রাখেন—জমজম কিংবা গঙ্গাজল। এমনকি পোষাকেও মিল খুঁজে পাওয়া যায়—একদিকে ইহরাম, অন্যদিকে সাদা ধুতি বা বস্ত্র।
পশু বলি কিংবা কুরবানিতেও দু’দলের মধ্যে এক অসাধারণ সাদৃশ্য রয়েছে। উদ্দেশ্য এক—আত্মাকে পবিত্র করা বা স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন—শুধু পদ্ধতি ভিন্ন।
তবে সবচেয়ে বড় যে মিল—তা হলো, দুই ধর্মেই নারীর অবস্থান অনুন্নত। নারীকে পুরুষের নিচে স্থান দেওয়া হয়েছে, তার সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা সীমিত। স্বামীই একমাত্র অভিভাবক—এই বিশ্বাস দুই দিকেই দেখা যায়।
আরেকটি জিনিস দু’দিকেই এক—পাপমোচনের জন্য ধর্মীয় নেতা বা প্রতিষ্ঠানকে দান-ধ্যান দিয়ে সন্তুষ্ট করা। কেউ মসজিদ বানান, কেউ মন্দির—কিন্তু উদ্দেশ্য প্রায় একই।
এমনকি মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের চিত্রায়নেও অদ্ভুত সাদৃশ্য রয়েছে—উভয় ধর্মেই একধরনের স্বর্গের বর্ণনা আছে, যেখানে থাকবে ভোগ-বিলাস, অপ্সরা, হুর বা দুধ-আঙ্গুরের প্রতিশ্রুতি।
এতসব মিল থাকা সত্ত্বেও ধর্মের নামে রক্ত ঝরছে। কারণ একটাই—ধর্মানুভূতিকে আমরা এতটাই সংবেদনশীল করে তুলেছি যে, সেটিকে প্রশ্ন করাও যেন মহাপাপ। আমাদের ভাবনাচিন্তা, আমাদের সহনশীলতা—সবকিছুই ধর্মীয় অনুভূতির কাছে পরাজিত। এখানে কেউ কিছু বললেই তাকে ‘নাস্তিক’, ‘ভন্ড’ কিংবা ‘আঁতেল’ বলে গালমন্দ করা হয়। কেউ ব্যতিক্রমী মত দিলে তার জন্য ছুরি উঠতে সময় লাগে না।
ধর্ম আমাদের শান্তি শেখাতে এসেছিল বলে দাবি করে—কিন্তু ইতিহাস বলে, ধর্মের নামে সবচেয়ে বেশি যুদ্ধ আর রক্তপাত হয়েছে। শান্তির নামেই প্রাণহানি। ভালোবাসার ছলে ঘৃণার বীজ।
তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে—এই ধর্ম, যে এত মিল থাকার পরেও বিভেদ বাড়ায়, যার নামেই মানুষ খুন হয়, সেই ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী? ধর্ম যদি মানুষকে একত্রিত করার পথ হয়, তবে কেন এত বিভক্তি?
একটা কথা সত্য—আমরা সবাই একদিন মরবো। কারো ফিরতি টিকিট নেই। সবাই জানি, মৃত্যুর পরে কী হবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না। অথচ তারই ভিত্তিতে আজও চলছে এক অনন্ত দ্বন্দ্ব।
ধর্মের নামে যুদ্ধ কেউ থামাবে না—কারণ আমরা থামতে চাই না। বরং এই সংঘাতেই আমাদের একধরনের আত্মতৃপ্তি। আমরা নিজেদের সঠিক প্রমাণ করতে গিয়ে ভুলে যাই, মানবতাই সবচেয়ে বড় ধর্ম। যে দিন এ সত্য উপলব্ধি হবে, সেদিন হয়তো সত্যিকারের শান্তির শুরু হবে।
12 Responses
লন্ডনে বইসা বালের লেখা লিকস? দেশে আয় সাহস থাকলে
দারুণ চিন্তা।
আপনার লেখায় বাস্তবতা প্রতিফলিত।
বিরাট লেখক হইসস তুই।এইজন্য তোরে আর তোর পরিবাররে একটা সংবর্ধনা দিতে চাই। দেশে আয় তুই, তোরে আর তোর ফ্যামিলিরে চাপাতির কোপে কোপে সংবর্ধনা দিব।
লেখাটি পড়ে মন বিষণ্ন হয়ে গেল।
লেখাটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
এতটা একপেশে ভাবনা দেখলে মন খারাপ হয়।
কাফেরের বাচ্চা, তোরে আর তোর বাপরে কুচি কুচি কইরা কুত্তারে খাওয়ামু।
আপনি আসলেই কি লেখক?
এমন দৃষ্টিভঙ্গি প্রশংসনীয়।
আপনি শুধু সমালোচনা করতে জানেন।
তুই একতা নাস্তিকের বাচ্চা। জারজের বাচ্চা। তোর উপরত আল্লাহর গজব পড়বে। অপেক্ষা কর। দেখবি সব।